ইসলামে বহুবিবাহ করা কোনক্রমেই বৈধ নয়।যদিও প্রাক ইসলামিক যুগে বহুবিবাহ বৈধ ছিল তবে শর্ত ছিল যে বিবাহযোগ্য কন্যাটি অবশ্যই এতিম হতে হবে।
অধিকাংশ মুসলমান এমনকি অধিকাংশ আলেমগন মত দিয়েছেন যে ইসলামে বহুবিবাহ অবশ্যই বৈধ। হ্যা, অবশ্যই বৈধ ছিল তবে শর্তগুলো বিষয় এ কেও মনোযোগ দেয় না বা জেনেও বিষয়টা এরিয়ে যায়। ইসলামে বহুবিবাহকে বৈধ প্রমান করার জন্য অধিকাংশ আলেম যে আয়াতটি উপস্থাপন করেছেন সেটা হচ্ছে সুরা নিসার ৩ নং আয়াত।
এখানে খেয়াল করুন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে এতিম মেয়েদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অধিকাংশ আলেম প্রথম লাইনটা বাদ দিয়ে আয়াতটা উপস্থাপন করেন , যেটা একটা অসততা এবং দু:খজনক বিষয়।
অনেক আলেম আবার ইসলামে বহুবিবাহ বৈধ প্রমান করার জন্য অনুবাদে ব্রাকেটের (অন্য নারী) বা ইংরেজিতে (Others) শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন , কিন্তু সেটা কোরানের অংশ নয় , উক্ত আলেমের নিজের মতামত।এসকল আলেমদের মতে শুধু এতিম মেয়ে নয় বরং আল্লাহ তালা সব মেয়েদের বুঝিয়েছে বলে দাবি করে থাকেন ওনারা, কিন্তু এই দাবি কতখানি সঠিক পর্যালোচনা করে দেখা যাক ।
সুরা নিসার উক্ত আয়াত পর্যালোচনা করার পুর্বেই আরেকটা আয়াত অর্থাৎ সুরা ইয়াসিনের ৩৬নং আয়াতটা আমরা একটু দেখে নিই।মহান আল্লাহ তালা বলেন,
‘পবিত্র তিনি (মহান আল্লাহ), যিনি জমিন হতে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে পয়দা করেছেন।’
উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তালা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি প্রত্যেক প্রজাতিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। ইসলামে বহু বিবাহ বৈধ থাকলে এই আয়াতের ব্যত্যয় ঘটে। কারণ, এটা সুস্পষ্ট যখন একজন পুরুষ একইসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করবেন; তখন কি আর জোড়া থাকে?
তাহলে মহান আল্লাহ যেখানে নিজে বলছেন মানুষকেও তিনি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, সেখানে ইসলামে বহু বিবাহের সুযোগ কি আছে বলে মনে হয় ?
এবার আমরা আসল কথায় ফিরে আসি। সুরা নিসার (৪ --৩) আয়াতের অনুবাদটা একটু দেখা যাক ঃ-
এই আয়াতে লক্ষ্য করুন আল্লাহ তালা শুধু এতিম মেয়েদের ৪টা বিবাহের কথা বলেছেন এবং আবার শেষের অংশে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ বা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ,
এই অংশের ব্যাখ্যায় যে কেও দাবি করতেই পারেন তিনি সবাইকে সমান ভাবে মর্যাদা দিতে পারবেন, সবাইকে সমান সুযোগসুবিধা সম্বলিত আলাদা ঘর বা বাড়ী, সমান অর্থ,সমান ভালোবাসা দিতে পারবেন তাহলে কি ইসলামে বহুবিবাহ বৈধ হবে?
কিন্তু না আল্লাহ তালা সুরা নিসার ১২৯ আয়াতে উল্লেখ করেছেন,
এখন আপনি নিজে যদি উপরোক্ত দুইটা আয়াতকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করেন।প্রথমত মহান আল্লাহ তালা বললেন যে তোমরা তখনই ২/৩/৪ টা বা এতিম মেয়েকে বিবাহ করতে পারবা যখন তাদের সাথে ন্যায়সংগত আচরণ করতে পারবা।
পরবর্তীতে রব্বুল আলামিন বললেন মানুষ যত চেষ্টাই করুক না কেন সবাইকে সমানভাবে আচরণ করতে পারবে না। তাহলে টোটালি কি দাড়ালো? আপনি সমান আচরণ করতে পারবেন না অর্থাৎ ইসলামে বহুবিবাহ করার জন্য যে কন্ডিশন সেটাও ফিলআপ করতে পারবেন না। অর্থাৎ ইসলামে বহুবিবাহ বৈধ না।
আরো পড়ুন।মেয়েদের চাকরি করা কি বৈধ?
অর্থাৎ সোজাসুজি বলতে গেলে সুরা নিসার আয়াত ১২৯ নাজিল হওয়ার সাথে সাথে সুরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতের নির্দেশ অর্থাৎ ইসলামে বহুবিবাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল হয়ে গেছে বা মানসুখ হয়ে গেছে। কারন মহান তালা আল্লাহ ই বলেই দিয়েছেন কোন মানুষই সব নারীকে সমান ভাবে মর্যাদা দিয়ে রাখতে পারবে না ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ তালা তাহলে কেন ইসলামে বহুবিবাহের কথা উল্লেখ করেছেন। সুরা নিসা কোরআনের শরীফের ৪ নম্বর সুরা কিন্তু নাজিলক্রম অনুযায়ী এটা ৯২ সুরা।এছাড়া মদীনাতে অবতীর্ণ সুরার ভেতর এটি ৬ নম্বর।অর্থাৎ সুরাটি হিজরতের কিছুদিন পরই অবতীর্ণ।
ওইসময় ওহুদ যুদ্ধে প্রচুর মুসলিম শহীদ হন। পরবর্তীতে সেইসকল শহীদগনের মেয়েরা যাতে অসহায় হয়ে না যান,তাদের আশ্রয় দানের জন্য আল্লাহ তালা উক্ত আয়াত নাজিল করেছিলেন এবং ইসলামে বহুবিবাহকে বৈধতা দান করেছিলেন ।
আর উক্ত আয়াতের শানে নুজুল থেকে আরেকটা বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়, ইসলামে বহুবিবাহের অনুমতি বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রদান করা হয়েছিল। ইসলামে বহুবিবাহ স্বাভাবিক কোন বিধান নয়।বিশেষ পরিস্থিতিতে বা যুদ্ধ অথবা অন্য কোনও কারণে নারীর সংখ্যা অধিক হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে একজন পুরুষ একাধিক বিবাহ করতে পারবে।
উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট বা শানে নুযূল পর্যালোচনা করলে আমরা উক্ত ধারণাই পাই।
পরবর্তীতে কেও যাতে উক্ত আয়াতের অপব্যবহার করতে না পারে এজন্য মহান আল্লাহ তালা ১২৯ তম আয়াত নাজিল করেছিলেন এবং ইসলামে বহুবিবাহ কে বাতিল ঘোষণা করেন।
এখন তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া হয় যে শুধু এতিম না অন্য যেকোনো মেয়েদেরকেও এই আয়াতে বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাহলে ৪ টা বিবাহ করা যাবে কি বা ইসলামে বহুবিবাহ বৈধতা পেয়ে যাবে ?
উত্তরঃ কোনক্রমেই না, কারন হচ্ছে সুরা নিসার ১২৯ তম আয়াত নাজিল হওয়ার সাথে সাথেই ২/৩/৪ বিবাহের নির্দেশ বাতিল বা মানসুখ হয়ে গেছে।
সুতরাং ইসলামে বহুবিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল।
সুতরাং কেও যদি একাধিক বিবাহের জন্য মনস্থির করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভালো কোন আলেমের সাথে খোলাখুলি কথা বার্তা বলে নিবেন অবশ্যই।
0 Comments