আমাদের চারপাশের যত বড় বড় আবিষ্কার তার অধিকাংশ করেছেন অমুসলিম বিজ্ঞানীরা। পেনিসিলিন,ভ্যাকসিন এর মত যুগান্তকারী আবিষ্কার, যার কারনে কোটি কোটি মানুষ বেচে যাচ্ছে এগুলো অমুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার। তাহলে মানুষের জন্য এত ভালো কাজ করেও শুধুমাত্র অমুসলিম হওয়ার কারণে জাহান্নামে যাবে? অমুসলিমরা কি জান্নাতে যাবে না?
না,এই ধারণা সম্পুর্ণ ভুল। অমুসলিমরাও জান্নাতে যাবে। নিশ্চয়ই এই লাইনটা পড়ার পর আকাশ থেকে পড়লেন? কিন্তু না আপনি এই আর্টিকেল টা পুরোটা পড়লে নিশ্চয়ই আপনার ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। জান্নাত আর জাহান্নাম এই দু'টি যায়গার যে কোনোটাতে যেকোন মানুষ এমনকি যেকোন ধর্মের মানুষই যেতে পারে।অর্থাৎ অমুসলিমরাও জান্নাতে যাবে।
আপনি আপনার চারপাশে তাকালে যত মুসলিম দেখবেন তার ৯৫% হচ্ছে পারিবারিক সূত্রে মুসলিম ।খুব সামান্য লোকই আছে যারা ইসলাম নিয়ে ভাবে,ইসলামকে সঠিকভাবে পালন করে এবং অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামকে তুলনা করে তারপর ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং পালন করছে । মহান আল্লাহ তালা সকল মুসলিমকে ধর্ম নিয়ে জ্ঞান অর্জন বা স্টাডি বা গবেষণা করতে বললেও অধিকাংশ মুসলমান কখনোই সেটা করেন না। জন্মসূত্রে ইসলামকে পেয়েছেন, অন্য সবাই যেভাবে ইবাদত করে, শুধুমাত্র সেটা দেখেই অন্ধভাবে ধর্মকে পালন করেন ।
আপনি যদি এদের যে কাওকে ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন করেন দেখবেন এরা বলবে এসব জিজ্ঞেস করা হারাম।চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে হবে। আসলে এদের কাছে কোন উত্তর নেই। কেননা এরা অন্ধভাবে ধর্ম পালন করে , এদের কাছে ইসলাম হচ্ছে পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ধর্ম, বাপ দাদা পালন করেছেন তাই তারা পালন করে।
তাহলে কথা হচ্ছে, সেসব অমুসলিম মহামানব যারা নিজেদের জীবন টা মানুষের উপকারে ব্যয় করেছেন, তারা অমুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছে এটাই কি তাদের দোষ ? তারা যদি ইসলাম ধর্ম পালনকারী কোন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করতো তবে তারাও হয়তোবা মুসলিমই হতো । যেহেতু মানুষ বা যেকোন প্রানীর জন্ম মৃত্যু শুধুমাত্র আল্লাহর হাতে,তাহলে তারা কেন জন্মের দায়ে জাহান্নামে যাবে ?
এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বলা যায়, মহান আল্লাহ তালা তাদের সবাইকেই জ্ঞান বা ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন, তাদের কাছে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য কোরআন হাদিস ছিলো , তাহলে কেন তারা সত্য পথ খুজে নিয়ে মুসলিম হলো না?
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষের ভেতর কতজন ধর্ম নিয়ে ভাবে বা গবেষণা করে। নিজের ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের তুলনা করে দেখে? সব মানুষই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মকেই চোখ বন্ধ করে পালন করে।একদম জেনে বুঝে, অন্য ধর্মের সাথে তুলনা করে, অন্য ধর্ম সম্পর্কে জেনে, নিজের ধর্মের ভুল পেয়ে তারপর ইসলাম বা অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছে এমন লোক কয়জন আছেন ?
অবশ্যই আছে,তবে তাদের সংখ্যা খুবই হাতেগোনা । আজকে যে লোক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছে বলে আল্লাহ আল্লাহ করতেছে,সেই ব্যক্তিই যদি হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করতো তাহলে দেখা যেত কৃষ্ণ নাম জপতো। !!!
সুতরাং যদি কোন অমুসলিম সত্য অনুসন্ধান করে মুসলিম না হওয়ায় যদি কেয়ামতের ময়দানে বিচারের সম্মুখীন হয়,তাহলে সেসকল মুসলমানদেরও বিচারের সম্মুখীন করা উচিত যারা কখনো নিজের ধর্ম নিয়ে ভেবেই দেখেনি।
নাহলে ন্যায় বিচার বাধাপ্রাপ্ত হবে।কিন্তু মহান আল্লাহ তালা তো অসীম দয়ালু, সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। মহান আল্লাহ তালা সেরুপ ব্যবস্থা করেও রেখেছেন।
এবার বিস্তারিত দেখা যাক।
অমুসলিমরা কি জান্নাতে যাবে এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইমাম আল-গাযালী সমস্ত অমুসলিমদেরকে তিনটি শ্রেনিবিভাগে বিভক্ত করেছিলেন [২]। যদিও পরবর্তী কালে মুসলিম গবেষকরা সেই শ্রেনীবিভাগকে কিছুটা সংশোধন করে চারটি শ্রেনিতে বিভক্ত করেন।[৩,৫,৬]।
শ্রেনি নম্বর ১-
প্রথম শ্রেনিতে তাদের রাখা হয়েছে তাদের যারা ইসলামের সংস্পর্শে আসেই নি।ইসলাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকার কারনে তাদের ইসলাম গ্রহন করার প্রশ্নই আসে না।আপনি আমি হয়তো যেকোন ধর্ম সম্পর্কে চাইলেই খোজ নিয়ে দেখতে পারবো৷ কিন্তু আফ্রিকার গহীন জংগলে এমন অনেক উপজাতি আছে যারা আধুনিক মানুষের সংস্পর্শেই আসেনি।তারা ইসলাম সম্পর্কে জানবে টা কিভাবে।এমনকি জন্মগতভাবে যারা অন্ধ বা কালা,অল্প বয়সে মারা যাওয়া বাচ্চারাদেরকেও প্রথম শ্রেনিতে রাখা হয়েছে ।
শ্রেনি নম্বর ২ –
এই শ্রেনিতে তাদের রাখা হয়েছে যারা ইসলাম সম্পর্কে জেনেছে কিন্তু সঠিক তথ্য পায়নি এমনকি তথ্য পাওয়ার সুযোগ ও নেই।
শ্রেনি নম্বর ৩ –
শ্রেনি নম্বর ৪ –
এই শ্রেনির অমুসলিম তারাই যারা প্রমান সাপেক্ষে জানতে পেরেছে যে ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম, তবুও তারা ইসলাম গ্রহণ করেনি।
শ্রেনি ১ ও ২ এর অমুসলিমরা নিশ্চিত জাহান্নামি নয় কারন যেসকল মানুষের কাছে ইসলামের বাণী সঠিকভাবে পৌঁছায়নি, মহান আল্লাহ তালা তাদের বিনা হিসেবে শাস্তি দিবেন না। কারন, মহান আল্লাহ তালা পবিত্র কুরআন এ বলেছেন:
কোনো রাসূল (বার্তাবাহক) না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি দেই না। [সূরা ইসরা ১৭:১৫ আয়াতাংশ]
শ্রেনি ৩ এর জন্য অর্থাৎ যারা ইসলামের বানী সঠিকভাবে পায়নি,আল্লাহ তালা হাসরের ময়দানে তাদের ঈমানের পরীক্ষা নিবেন । মহান আল্লাহ তালা তাদের কাছে জানতে চাইবেন – “তোমাদের কাছে যদি আমার নবী পৌঁছাত তোমরা কি করতে”? মানুষ তখন উত্তর দেবে– তারা আল্লাহ তালার উপর বিশ্বাস করতো”।মহান আল্লাহ তালা তখন ফেরেস্তা পাঠাবেন যারা ওই সকল মানুষকে বলবেন – “আল্লাহ তালা সবাইকে আগুনে কুয়াতে ঝাঁপ দিতে বলেছেন”। তখন যেসকল মানুষ ফেরেশতার কথা শুনে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে দিবে তারা জান্নাতী,আর যারা ফেরেস্তার কথায় ঝাপ দেবে না তারা জাহান্নামি।
মুসনাদ ইমাম আহমদ ও সহীহ ইবনে হিব্বানে এই হাদিসটি পাওয়া যায়। [১,৩,৪]
শ্রেনি ১,২,৩ এর ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তালা দয়াপরবশ আচরন করলেও শ্রেনি ৪ এর অমুসলিমরা নিশ্চিত জাহান্নামি। কারন তারা সত্যপথের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মহান আল্লাহ তালার সাথে শিরক করেছে।
এখন কোন অমুসলিম কোন শ্রেনিতে পড়বে সেটা একমাত্র মহান আল্লাহ তালা জানেন।এজন্য আমরা কখনো কোন অমুসলিমের মৃত্যুর পর দু’আ করতে পারবো না । কারণ, অমুসলিম মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আ করা ইসলামে হারাম[৭]।
সব কথার শেষ কথা একটাই কোন ব্যক্তি মুসলিম হলেই সে নিশ্চিত বেহেস্তে যাবে আর অমুসলিম হলেই নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে এটা নিশ্চিত নয়। কে জান্নাতে যাবে, আর কে দোযখে যাবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির কৃতকর্মের উপর।
অমুসলিমরা কি জান্নাতে যাবে না? রেফারেন্স:
১। Yasir Qadhi on The fate of those who never heard of Islam – http://youtu.be/H4PPwrvFTTk?t=6m6s
২। Salvific Exclusivity – Yasir Qadhi
http://muslimmatters.org/2014/04/11/salvific-exclusivity-i-shaykh-yasir-qadhi/
৩। Shaykh Arifi on The fate of those who never heard of Islam – http://youtu.be/JgdmhxIa56M
৪। IslamQA on The fate of those who never heard of Islam – http://islamqa.info/en/1244
৫। Seerah Pt. 77 – Yasir Qadhi http://youtu.be/EaVuirmtlZE?t=51m49s
৬। Seerah Pt. 78 – Yasir Qadhi http://youtu.be/-LWiMqBKIvQ?t=53m44s
৭। Can we pray for the non-Muslims who passed away? – Seeker’s guidance
http://seekersguidance.org/ans-blog/2011/05/23/can-we-pray-for-non-muslims-who-passed-away/
0 Comments