নবীজির মৃত্যু সম্পর্কে অনেক নাস্তিকদের বলতে শোনা যায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সঃ কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। নবীজি যদি সত্য নবী হবেন তাহলে তিনি কেন বুঝতে পারেননি যে খাবার এ বিষ মিশ্রিত আছে? বিষ মিশ্রিত খাবার খেয়েই কি নবীজির মৃত্যু হয়েছিল?
না,নবীজির মৃত্যুর ঘটনা সম্পুর্ন ভিন্ন ।কারণ মৃত্যুর সময় মেনিনজাইটিস ধাঁচের জ্বর ছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
নাস্তিকদের এসকল দাবি হচ্ছে সত্যের সাথে কিছুটা মিথ্যা মিশ্রিত করা। এটা সত্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ সঃ যখন খায়বার বিজয়ের ফিরে এলেন তখন সালাম বিন মুশরিকের স্ত্রী যায়নাব বিনতে হারিস নবীজির জন্য কিছু বকরির মাংস রান্না করে হাদিয়া হিসেবে প্রদান করেন।সেই মহিলা মুলত খোজ নিয়ে জানতে পেরেছিল মহানবী রানের মাংস অধিক পছন্দ করেন এজন্য সেই মহিলা রানের মাংসে বেশি করে এবং সমস্ত মাংসেই বিষ মিশ্রিত করে।নবী কারীম (সাঃ) মাংসের টুকরা মুখে নেওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তালা হজরত জিবরাইল মারফত নবিজির কাছে খবর পাঠিয়ে দেন।তখন নবিজি মাংসের টুকরা মুখ থেকে ফেলে দেন এবং বলেন, (إِنَّ هٰذَا الْعَظْمُ لَيُخْبِرُنِيْ أَنَّهُ مَسْمُوْمٍ)‘ অর্থ এই হাড্ডি আমাকে বলছে তার সঙ্গে বিষ মিশ্রিত রয়েছে।’
তখন সাথে সাথে বিষ প্রয়োগকারী যায়নাবকে জিজ্ঞাসায় করলে সে স্বীকার করে যে সে নবিজিকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য নিয়ে একাজ করেছে।তবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সঃ নিষেধ করার পূর্বেই বিশর বিন বারা’ বিন মারুর (রাঃ) এক টুকরব মাংশ গিলে ফেলেন।যার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়ে যায় পরবর্তীতে । বিশর (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর যায়নাবকে হত্যার অভিযোগে দণ্ডিত করে শাস্তপ্রদান করা হয়।
[ যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৩৯-১৪০ পঃ, ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৪৯৭ পৃঃ, মূল ঘটনা সহীহুল বুখারীতে বিস্তারিত এবং সংক্ষিপ্ত দুভাবে বর্ণিত হয়েছে ১ম খন্ড ৪৪৯ পৃঃ, ২য় ৬১০ ও ৮৬০ পৃ: ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৩৩৭ ও ৩৩৮ পৃঃ।]
মুলত এটাই হচ্ছে খায়বারে রাসূল সাঃ কে বিষ প্রয়োগের আসল ঘটনা।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এই ঘটনার অনেক পরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতে তার রোগের লক্ষ্মণ আর সময়কাল দেখে একে মেনিনজাইটিস ধাঁচের জ্বর বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।তবে আর যাইহোক বীষ প্রয়োগে যে উনার মৃত্যু হয়নি এই বিষয় এ বহু প্রমান পাওয়া যায়।
মুলত নাস্তিকরা এসব প্রশ্নের মাধ্যমে দুর্বল ঈমানের ব্যক্তিদের টার্গেট করে থাকে আর তাদের ইমানকে আরো হালকা করে দেয়।
নবীজির মৃত্যুর ঘটনা ঘটনা ইতিহাসে খুব ভালোভাবেই লিপিবদ্ধ করা আছে।
বিষপানের ঘটনার বছরখানেক পরে কোন একদিন সিরিয়ায় বিদ্রোহী দমনের জন্য হয়রত ওসামা(রা:) কে দায়িত্ব দিয়ে নবীজি ঘরে ফিরে আসেন। কারণ নবী মুহাম্মদ (সা:) এর এতটাই মাথা ব্যাথা ছিল যে সেই খানে থাকা তার জন্য সম্ভব ছিল না।
নবীজি ঘরে ফিরে এসে দেখলেন আয়েশা (রাঃ) এর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।কিছুসময় পরে আয়িশা (রাঃ) এর মাথা ব্যাথা ঠিক হলেও দয়াল নবীর অবস্থা আরো খারাপের দিকে যায়।পরবর্তীতে মাথা ব্যাথার পাশাপাশি শরীরে জ্বরও আসে।
নবীজির মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে হযরত আবু সাঈদ খুদরী(রা:) হতে বর্নিত আছে , নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর প্রচন্ড জ্বর হয়েছিল। তখন হুজুরের শরীরের উপর কম্বল দেয়া হয়েছিল। জ্বর এত বেশি ছিল যে কম্বলের উপর হাত রাখলেই জ্বরের তীব্র তাপ অনুভব করা যেত।
পরবর্তী দিন মুহাম্মদ (সা:) জ্বরের পাশাপাশি প্রচন্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। যন্ত্রনার মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায় । এই সময় নবী করিম (সঃ) ব্যাথার তীব্রতা বোঝাতে তার কষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন যে খাইবারে তিনি যে বিষযুক্ত খাবার খেয়েছিলেন, এখন সেই যন্ত্রনা অনুভব করছেন।নাস্তিকরা এই কথাটাকেই বিকৃত করে প্রচার করে।
নবীজীর এই তীব্র কষ্ট আর অসুস্থতা নিয়েই "সফর" মাস এর সমাপ্তি হলো ।শরীর তখন সর্বোচ্চ পর্যায়ের অসুস্থ। যদিও গত এক মাস তিনি অসুস্থতা নিয়েই নামাজের জামায়াতে ইমামতি করেছেন।কিন্তু ১১ রবিউল আওয়াল, রবিবার সেটা আর সম্ভব হলো না।নবীজির মৃত্যুর ঘটনা থেকে জানা যায় দয়াল নবী ওজু করতে গিয়েই ৩ পড়ে যান। সেই দিন হজরত আবু বকর (রাঃ) নামাজের জামায়াতে ইমামতি করেন।
নামাজ শেষে দয়াল নবী সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেন।
অবশেষে তার পরবর্তী দিন অর্থাৎ ১২ই রবিউল আউয়াল সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব দয়াল নবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন।
তবে মৃত্যুর সময় উনি একটা কথা ৩ বার বলেন যা উনার কবরের সামনের দেয়ালে লেখা আছে। - হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন তাদের তথা নবী, সিদ্দীক, শহীদ সৎ ব্যক্তিদের সাথে আমাকে ও শামিল করে নিন। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন,রহম করুন এবং সুমহান বন্ধুর সাথে মিলিয়ে দিন।”
0 Comments